সারাদেশ

৫ সন্তানের মা হয়েও এক লোকমা ভাতের জন্য হাহাকার

  প্রতিনিধি ২১ জানুয়ারি ২০২৫ , ৫:৪২:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

দুমকী( পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।
৫ টি জীবন যিনি পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন আজ তার নিজের জীবনের আলো নিভে যাওয়ার পথে। ১ লোকমা ভাতের জন্য যাকে দেখে তার দিকেই থালা এগিয়ে দেয়। কাউকে ঘরে ঢুকতে দেখলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। জীর্ণ শীর্ণ শরীর আর অবস হয়ে যাওয়া সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে আপ্রাণ বসে উঠবার চেষ্টা। ঘরে নেই কোন খাবার, নেই কোন ঔষধ। প্রতিবেশীদের দয়ায় ও দেখভালে কোন রকম বেঁচে আছে মৃত্যু পথযাত্রী রাশিদা বেগম(৬২)
পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কলবাড়ি বাজারের উত্তর দিকে রাস্তার পাশে অরক্ষিত দরজা, জানালা বিহীন ঘরে বসবাস করেন ৫ সন্তানের মা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত অসুস্থ রাশিদা বেগম।
সৌদি প্রবাসী স্বামী ফারুক হাওলাদার বেশ কয়েক বছর পূর্বে রাশিদা বেগমকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। অপরদিকে তিন ছেলে সবাই বিয়ে করে স্ত্রী সন্তানসহ ঢাকায় থাকে। দুই মেয়ে বিবাহিত স্বামীর সাথে থাকেন। ৫ ছেলেমেয়েরা কেউ অসুস্থ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত বৃদ্ধ মায়ের ভরন পোষণ ও খোঁজ খবর নিচ্ছে না। তিন ছেলের কেউ মায়ের চিকিৎসার ভার ও ভরণপোষণ করতে পারবেনা বলে প্রতিবেশীদের জানিয়েছেন।
মরিওম বেগম নামের এক প্রতিবেশী জানান, দেড় বছর যাবৎ রাশিদা বেগম প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ছেলেরা অসুস্থ মাকে খোলা ঘরে ফেলে রেখে ঢাকায় চলে গেছে। খাওন পড়ন তো দুরের কথা খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয় না। আমরা বাড়ির আসপাশের লোকজন যে যা পারি খাবার দেই। অসুস্থ রাশিদা বিছানা থেকে উঠতে পারেনা। পায়খানা প্রস্রাব করে বিছানায়। আমরা যে যখন পারি পরিস্কার করে দেই।
অপর এক প্রতিবেশী জাফর হাওলাদার বলেন, রাশিদা বেগম লোকজন দেখলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। ইশারায় নিজের কষ্টের কথা বলতে চায় কিন্তু কথা বুঝা যায় না। এ অবস্থায় ছেলেমেয়েরা কোন খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয় না। অসুস্থ রাশিদা বেগম অযন্তে অবহেলায় ও খাবারের অভাবে ক্রমশই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এখন তার ছেলে মেয়েদের জরুরি চিকিৎসা ও সেবাসহ কাছে থাকা দরকার।
মো.আলমগীর হাওলাদার বলেন, রাশিদা বেগমের বড় ছেলেকে এবিষয়ে জানানো হলে তিনি মাকে ভরন পোষণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এব্যাপারে তিন ছেলে যাতে মায়ের চিকিৎসা ও দেখাশুনা করে তার জন্য যথাযথ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রাশিদা বেগমের বড় ছেলে মো. জুলহাস হাওলাদারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিজের স্ত্রী সন্তানসহ ঢাকায় অবস্থান করায় মায়ের খোঁজ খবর ঠিকমতো নিতে পারছেন না। তাছাড়াও আমাদের বাধা সত্ত্বেও মেঝ ভাই জাকির হোসেন মায়ের নামের সম্পত্তি বিক্রি করায় মনোমালিন্যের কারণে মায়ের খোঁজ খবর নেওয়া হয় না। ছোট ভাই রাকিব‌ মায়ের কোন ভরন পোষণ ও খোঁজ খবর বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই। তার সাথে আমার সাথেও কোন যোগাযোগ নাই।
মেজ ছেলে মো. জাকির হোসেনের ভাষ্য, মায়ের জমি বিক্রি করে ঘর তুলতে এবং চিকিৎসা করাতে আমি অনেক দেনা হয়েছি। এমনকি কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। এ অবস্থায় আমার ৪ ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকার খরচ ও ঋনের কিস্তি দিতে হচ্ছে। এজন্য মায়ের ভরন পোষণ করতে পারছিনা। বড় ভাইকে বার বার বলার তিনি মায়ের খোঁজ খবর নেয় না। আর ছোট ভাই রাকিবকে মোবাইল কল দিলে সে ফোন ধরে না এবং আমাদের সাথে কোন যোগাযোগও রাখেনা।
স্হানীয় ইউপি সদস্য আকলিমা আক্তার বিথি বলেন,তাঁর ছেলেদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছি,তার ভরন পোষন ও ঔষধে অনেক টাকার প্রয়োজন। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে সব সময় ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না।

আরও খবর

Sponsered content

Design & Developed by BD IT HOST