ঢাকা

ঢাকার ২১ লাখ ভবন এখনই পরীক্ষা করা দরকার: অধ্যাপক আনসারী

  প্রতিনিধি ২১ নভেম্বর ২০২৫ , ৫:২৪:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পকে ভবিষ্যতের বড় ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা’ হিসেবে দেখে এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী।

শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে ঢাকায় যে বিপর্যয় ঘটে যাবে, সেই বাস্তবতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলছেন, বিল্ডিংগুলো এখনই চেক করা দরকার। বিশেষ করে ঢাকার এ ভবনগুলোর চেকিং ইমিডিয়েটলি দরকার।

এই প্রকৌশলী বলছেন, এখানে সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় হবে না, রাজউককে দিয়ে সাধারণ মানুষকে জানান দেবে, সব ভবন চেক করে সার্টিফিকেট দিয়ে দেবে যে বিল্ডিংগুলো বিল্ডিং কোড অনুযায়ী হয়েছে।

শুক্রবার সকালে ১০টা ৩৮ মিনিটে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭; উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার পাশে নরসিংদীর মাধবদীতে।

২৬ সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পে প্রাথমিকভাবে আতঙ্ক ছড়ায়, বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। এরপর আসতে থাকে প্রাণহানি আর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য।

ভবনের রেলিং ভেঙে পড়ে ঢাকায় তিনজন এবং দেয়াল ধসে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, আহত হয়েছে বহু মানুষ।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভবন হেলে পড়া, দেয়ালে ফাটল দেখা দেওয়া এবং পলেস্তরা খসে পড়ার খবর এসেছে।

অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, আজকের ভূমিকম্পটা বলতে পারি একটা ফোরশক। অর্থাৎ বড় ভূমিকম্প আসার আগে যে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়, তার অন্যতম।

১৮৯৭ সালে এই ভূখণ্ডে ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্পের ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এমন ভূমিকম্প আড়ইশ থেকে তিনশ বছর পর পর আসে। ১৯৩০ সালের পর এখানে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়নি। কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা রয়েছে।

শুক্রবারের ভূমিকম্পে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভবনে ফাটল ধরার প্রসঙ্গ ধরে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, এমন ক্ষয়ক্ষতি হবেই। ঢাকা শহরে প্রায় ২১ লাখের মত বাসা রয়েছে। তার মধ্যে ১৫ লাখ একতলা দোতলা বাসা। চার থেকে ছয় তলা ভবন প্রায় ৬ লাখের মত, দশতলা, ২০ তলাও রয়েছে।

একটি বড় ভবন ধসে পড়লে কতটা ক্ষতি হতে পারে, তা বোঝাতে গিয়ে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দেন অধ্যাপক আনসারী। সেজন্য সরকারকে এখনই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার তাগাদা দিচ্ছেন তিনি।

তার ভাষ্য, ঢাকার ভবনগুলোর অবস্থা কেন পরীক্ষা করা দরকার, শুক্রবারের ভূমিকম্প তা মনে করিয়ে দিয়ে গেছে। আজকের ভূমিকম্পে ঢাকা শহরের যত বিল্ডিংয়ের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, স্থাপনা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ভবন দেবে গেছে, ফাটল হয়েছে। রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রায় যে ক্ষতি হয়েছে, ৭ মাত্রার হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যাবে, ভেঙে যাবে ভবন, হতাহত হবে। ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে এমন ভূমিকম্প হলে ২-৩ লাখ মানুষ হতহাত হবে, ঢাকা শহরের ৩৫% ভেঙে পড়ার শঙ্কা আছে, অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

সেরকম বিপর্যয় এড়াতে ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করার ওপর জোর দিয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, কোনটি ঝুঁকিপূর্ণ দেখে রিপেয়ার করতে হবে, তারপর সার্টিফিকেট দিতে হবে। এখন থেকে গুরুত্ব সহকারের চেকিং করলে, বিল্ডিংগুলোকে সার্টিফিকেট দিলে, কালার ক্লাসিফিকেশন করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ ধরনের ক্ষেত্রে তিন ধরনের রং দিয়ে ভবনগুলোকে চিহ্নিত করা হয়।

অধ্যাপক আনসারী বলেন, আমেরিকা, ভারত, জাপানে ভূমিকম্পের আগে এ ধরনের ক্যাটাগরি করা হয়েছে। আমরাও এভাবে কালার কোড করে বিল্ডিংগুলোকে ট্যাগ করে, ভবনের গায়ে রং বসিয়ে দিতে পারি প্লাকার্ড দিয়ে।

আরও খবর

Sponsered content

Design & Developed by BD IT HOST