প্রতিনিধি ৮ অক্টোবর ২০২৫ , ৭:৩১:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লা প্রতিনি:
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ লাঘবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একটি সাব-সেন্টার উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে দোল্লাই নবাবপুরে চালু করা হয়। বিগত আট বছর সেখানে সপ্তাহে দুদিন সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হলেও গত চার মাস যাবৎ ওই সেন্টারের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
এতে উপজেলার অন্তত ছয়টি ইউনিয়নের জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম দুর্ভোগে পড়েন। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকদের সিন্ডিকেটে জিম্মি ওই সাব-সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার দোল্লাই নবাবপুরে জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে বাধ্য হয়েই ২০-৩০ কিলোমিটার দূরত্বে চান্দিনা উপজেলা সদরে গিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে হচ্ছে।
তবে দলিল লেখকদের অভিযোগ, মাধাইয়া থেকে নবাবপুর পর্যন্ত সড়কটি ভাঙাচোরা। যে কারণে দলিল লেখকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাব-রেজিস্ট্রারকে ওই সাব-সেন্টারে কার্যক্রম না করার অনুরোধ জানান। এ কারনে চার মাস যাবৎ চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই-নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের অস্থায়ী ওই সাব-সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চান্দিনা উপজেলা একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। অবস্থানের দিক থেকে উপজেলা সদরটি এক প্রান্তে। উপজেলা সদর থেকে শেষ প্রান্তের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটিও উপজেলা সদরে অবস্থিত।
উপজেলার প্রত্যন্ত ইউনিয়ন জোয়াগ, বরকরই, দোল্লাই নবাবপুর, গল্লাই ইউনিয়ন সহ মাইজখার ও মহিচাইল ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চান্দিনা উপজেলা সদরে এসে জমি দলিল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
২০১৭ সাল থেকে দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একটি সাব-সেন্টার চালু করা হয়। ৮ বছর ধরে সপ্তাহের প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার ওই সাব সেন্টারে নিয়মিত দলিল কার্যক্রম সম্পন্ন হতো।
২০২৫ সালের জুন মাস থেকে টানা চার মাসেরও বেশি সময় ধরে সড়ক বেহাল থাকার অযুহাতে ওই সাব-সেন্টারে যাচ্ছে না সাব-রেজিস্টার থেকে শুরু করে দলিল লেখকরা। এতে প্রায় ছয়টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জোয়াগ গ্রামের বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম জানান, রাস্তা ভাঙাচোরার অযুহাতে সাব-রেজিস্টার ও দলিল লেখকরা আসতে পারেন না। কিন্তু আমরা যারা দলিল করবো দলিল দাতা, গ্রহিতা, সাক্ষী ও সনাক্তকারীসহ অনেক লোক যাতায়াতে মনে হয় সমস্যা হয় না! তারা (সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলিল লিখকসহ) পঞ্চাশ জন যদি চান্দিনা থেকে নবাবপুর না আসে আমরা পাঁচশত লোক এই বেহাল সড়ক অতিক্রম করে চান্দিনা যেতে হচ্ছে।
চান্দিনা উপজেলা সাব-রেজিস্টার মাকসুদুর রহমান মঙ্গলবার জানান, সরকারি নির্দেশেই আমি সপ্তাহে দুই দিন নবাবপুর সাব-সেন্টারে যেতে প্রস্তুত। আমি চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি যোগদান করে বেশ কয়েকদিন সেখানে অফিস করেছি। দলিল লেখকরা সিন্ডিকেট করে সেখানে যেতে রাজি নয়। যে কারণে বাধ্য হয়েই ওই সাব সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বুধবার (৮ অক্টোবর) থেকে আবারও সেখানে কার্যক্রম চলবে।
চান্দিনা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, দোল্লাই নবাবপুর সাব-সেন্টারের কার্যক্রম চলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। সেখানে বসে কাজ করার জন্য চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত নেই। এখন ডিজিটাল যুগ, কম্পিউটার ছাড়া কার্যক্রমও চলে না। কিন্তু সেগুলো রেখে যে কাজ করবো সেই ব্যবস্থা নেই। এছাড়া মাধাইয়া থেকে নবাবপুর সড়ক বেহাল হওয়ায় যাতায়াতেরও অসুবিধা হচ্ছে। এ কারনে চার মাস যাবৎ সেখানে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আমরাই সাব-রেজিস্টার স্যারকে বলেছি।
Design & Developed by BD IT HOST